Sunday, July 15, 2012

ক্যালিগ্রাফি : আধ্যাত্মিক রেখাঙ্কন





[কালিমা তৈয়্যবা, ক্যানভাসে এক্রিলিক, শিল্পী মোহাম্মদ আবদুর রহীম]

শিল্পকলার জগতে 'স্পিরিচ্যুয়াল জিওমেট্রি' বা আধ্যাত্মিক রেখাঙ্কন বলে যে কথাটি প্রচলিত রয়েছে, তা ইসলামিক ক্যালিগ্রাফিকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আক্ষরিক অর্থে সুন্দর হস্তাক্ষর দিয়ে গড়া নান্দনিক লিপিকলাকে ক্যালিগ্রাফি বলে। ইসলামী ক্যালিগ্রাফি হাজার বছর পেরিয়ে এর সৌন্দর্য, স্পষ্টতা ও শৈল্পিক অভিব্যক্তির কারণে শিল্পকলায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। ইসলামী ক্যালিগ্রাফির যাবতীয় অর্জনের পেছনে মূল প্রেরণা হচ্ছে পবিত্র কুরআন। কুরআনের বাণীকে শত শত বছর ধরে শিল্পীরা হৃদয়ের সুষমা দিয়ে প্রকাশ করেছেন।


[টাইলস এনগ্রেভ ক্যালিগ্রাফি, শিল্পী আমিনুল ইসলাম আমিন]

ললিতকলায় ফিগারেটিভ বা জীবাকৃতির বিষয়টি ইসলামী ক্যালিগ্রাফি শিল্পীরা সযতনে এড়িয়ে গেছেন বিশ্বাসগত কারণে। এ জন্য শিল্পকলায় একটি অসীম সম্ভাবনার ভিন্ন আঙ্গিকের ক্ষেত্র প্রকাশিত এবং প্রসারিত হয়েছে। শিল্পের যাবতীয় অনুসঙ্গ এতে রয়েছে আর এতে প্রতিনিয়ত প্রতিসাম্য, ফুলেল নক্সাকলা এবং জ্যামিতিক-গাণিতিক বিষয়াবলীকে শিল্পের ধারায় তুলে ধরা হয়েছে। ক্যালিগ্রাফির হরফের গতি প্রকৃতিতে যে অন্তরাগত সৌন্দর্য প্রয়োগ করা হয়, তা শেষ র্পযন্ত আধ্যাত্মিক রেখাঙ্কন হিসেবে দর্শককে মুগ্ধ করে।
সাম্প্রতিক ঢাকায় ক্যালিগ্রাফির দুটি বড় প্রদর্শনী আয়োজন হয়েছে। মইনিয়া ক্যালিগ্রাফি ফাউন্ডেশন ৯ জুন ২০১২ ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতা এবং ১২-২০ জুন জাতীয় জাদুঘরে ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এতে দেশের অর্ধশতাধিক শিল্পী অংশ নেন। অসাধারণ মনমুগ্ধকর এ প্রদর্শনী দর্শকদের মোহিত করে।


[আইসেসকো'র ডিরেক্টর জেনারেলকে ক্যালিগ্রাফির পরিচিতি দিচ্ছেন শিল্পী মোহাম্মদ আবদুর রহীম]

১৪ জুলাই ২০১২ শিল্পকলা একাডেমী গ্যালারীতে ৩২ শিল্পীর ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। ঢাকাকে ২০১২ সালের এশিয় অঞ্চলের রাজধানী উদযাপন উপলক্ষে বছরব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনীতে আইসেসকো'র ডিরেক্টর জেনারেল ড. আবদুল আজিজ ওসমান আলতুআইজরি শিল্পকর্ম আগ্রহ নিয়ে দেখেন এবং শিল্পমানে অতুলনীয় বলে মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশে এ নবধারার শিল্পমাধ্যমটি জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। প্রদর্শনীতে প্রচুর দর্শকের উপস্থিতি এবং তাদের সপ্রশংস মন্তব্য দেখে তা ধারণা করা যায়।


[ইসলামী নক্সাকলা]

গত দু'দশকে বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির জাগরণে কয়েকজন শিল্পীর নিরলস প্রচেষ্টা ও কর্মতৎপরতা রয়েছে। শিল্পী মুর্তজা বশীর 'ক্যালিমা তৈয়্যবা' নামে একটি ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী করেন গত দশকের শেষ দিকে। এরপর প্রায় প্রতিবছর অব্যাহত রয়েছে এ শিল্পের প্রদর্শনী। সাইফুল ইসলাম, ইব্রাহীম মন্ডল, আরিফুর রহমান, মোহাম্মদ আবদুর রহীম এ অঙ্গনকে প্রসারিত ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ক্যালিগ্রাফিতে পেইন্টিং ধারাকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি এর ট্রেডিশনাল ধারাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে মোহাম্মদ আবদুর রহীমের অবদান বলা যায় সবচেয়ে বেশি। তিনি ক্যালিগ্রাফি অঙ্গনে নতুন ক্যালিগ্রাফি শিল্পী তৈরিতে বটবৃক্ষের মত কাজ করে চলেছেন। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা খোলাশা হবে, শিল্পকলার বর্তমান প্রদর্শনীর ৩২ শিল্পীর ১৬ জনই মোহাম্মদ আবদুর রহীমের ছাত্র। এ ছাত্রদের অনেকেই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে সুনাম কুড়িয়েছে।


[আলজেরিয়ায় ক্যালিগ্রাফি ফেস্টিভ্যালে মোহাম্মদ আবদুর রহীম]

ওস্তাদ আবদুর রহীম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ্যাওয়ার্ড অর্জন ও ইরানে একটি ইন্টারন্যাশনাল ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় বিচারক হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। আলজেরিয়া সরকারের আমন্ত্রণে সেখানে আন্তর্জাতিক ক্যালিগ্রাফি ফেস্টিভালে অংশগ্রহন ও ওয়ার্কশপে ড্রেমনেস্টর হিসেবে বক্তৃতা দেন।

বাংলাদেশে এ শিল্পধারাটি জনমনে প্রবল আগ্রহ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এর উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্র-
http://www.rahimcalligraphybd.blogspot.com/